Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সাংস্কৃতি

সাংস্কৃতি

সাংস্কৃতিতে খোকসা উপজেলা বরাবরই সমৃদ্ধ। এ উপজেলায় বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে।

১। খোকসা সংগীত বিদ্যালয়

২। শোমসপুর নবারণ পাঠাগার

৩। ক্লাসিক সুর ও সংগীত নিকেতন

৪। সুর ও বানী

৫। উদিচি শিল্প গোষ্ঠী

 

এছাড়াও খোকসার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি শিল্প গোষী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এ সব সংগঠন গুলো প্রতি নিয়ত খোকসার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে রাখছে।

 

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরকুষ্টিয়ার লালন শাহের লালনগীতির ব্যাপক চর্চার প্রভাব সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া জয়ন্তীহাজরার লোক-সংস্কৃতি, বাউলগীতি, আঞ্চলিক গীতি, নাট্যচর্চা, ভাসানগান ও মানিকপীরের গানউল্লেখযোগ্য।

কুষ্টিয়ার নদীয়ার প্রাচীন জনপদহওয়ায় এখানে লোকসংস্কৃতি বা গ্রামীণ সংস্কৃতি বিভিন্নভাবে চর্চার মাধ্যমেঐতিহ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। বাঙালীর সমাজ জীবনে নানা উৎসব আয়োজনে নানাধরণের গীত, কবিগান, ভাবগান, পুঁথিপাঠ, মেঠো গান, মানসার গান, ভাসান গান, ছেলে নাচানো গান, মানিকপীরের গান, বোলান গান, অষ্টগান, গাজীর গীত ওকৃষ্ণগান এগুলো উল্লেখযোগ্য। লোক সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রে ধর্মীয়প্রভাব ও এক শ্রেণীর প্রভাবশালী সমাজপতিদের বিদ্রুপান্তক দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষঅন্তরায় সৃষ্টি করলেও বহুকাল ধরেই লোকসংস্কৃতি জয়ন্তীহাজরার গ্রাম বাসীর সমাজজীবনেনানাভাবে বিদ্যমান রয়েছে।

 

বিয়ের গানঃ

 

লোক সংস্কৃতির ভান্ডার অফুরন্ত।প্রতিনিয়ত এর উপাদান বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আধুনিকতার উষ্ণ আবেদনেরপ্রেক্ষিতে অতীতের অনেক লোকসংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। তবে জয়ন্তীহাজরা গ্রামগুলোতে অশিক্ষিত মেয়েরা বিয়ের গানের শত শত পংক্তি অনর্গল মুখস্থ বলেযেতে পারে। এ সমসত্ম গান তাঁরা নিজেরাই সৃষ্টি করেন। জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলের প্রচলিত বিয়ের গান, , ক্ষীর খাওয়ানোরগান এখানে তুলে ধরা হলোঃ-

বিয়ের গানঃ ‘‘দুলাভাই গিয়েছে শহরে, আনবে নাকের নথরে

সেই নথ নাকে দিয়ে নাক ঘুরিয়ে নাচবো রে।’’

 

ক্ষীর খাওয়ানার গানঃ

‘‘আলুয়ার চালে কাঞ্চন দুধে ক্ষীরোয়া পাকালাম

সেই না ক্ষীরোয়া খেতে গরমি লেগেছে।

কোথায় আছ বড়ভাবী পাক্কা হিলোয়ররে।’’

 

 শারী গানঃ

এই গান হচ্ছে কর্ম সংগীত। খোকসা অঞ্চলে শারীগানের প্রভাব আজও বিদ্যমান। পাকা ঘরের জলছাদ পেটানোকিংবা কোন ভারী কাজের জোশ সৃষ্টির জন্য শারীগান গাওয়া হয়ে থাকে।

 

জারী গানঃ

জারীগান মূলতঃ ইসলামী দৃষ্টিকোনথেকে সৃষ্টি। জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়নে বিভিন্ন অঞ্চলে মহররমের সময় গায়করা দলবদ্ধ হয়ে বাড়ীবাড়ী জারীগান গেয়ে বেড়ায়। যাদবপুরের বেলাল হোসেন বয়াতী জারীগানেরগায়ক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও অনেক জারীগায়ক দল এ অঞ্চলে রয়েছে।জারীগানের কিছু অংশ তুলে ধরা হলোঃ-

‘‘ঈমান যে না আনিবে মক্কার উপরে

গোনাগার হয়ে যাবে দোযখ মাঝারে

আরে রোমের ও শহরে ছিল

ইব্রাহীম পায়গম্বর

বহুদিবস বাদশাহী করে এই দুনিয়ার পর।’’

 

শাস্ত্র গানঃ

একটানা বাদলার দিনে শাস্ত্রগানেরকদর দেখা যায়। জমিতে নিড়ানোর সময় অথবা ধান লাগানোর সময় শাস্ত্র গানগাওয়া হয়। গ্রামের গৃহস্থের বাড়ীর বৈঠকখানায় বৃষ্টির দিনে কখনও কখনওশাস্ত্রগানের আসর বসে শাস্ত্রগানের কাহিনী অনেকটা বর্ণনামূলক। শাস্ত্রগানেরউপমাঃ-

‘‘ঈমান খাঁটি ভবের খুঁটি শাস্ত্রের পরিচয়

ঈমান দিয়ে দেলকে আগে খাঁটি করা চাই,

নইলে নামাজ হবে নয়

আছে সত্য ঠিক যথার্থ তোমারে জানাই।’’

 

ভাটিয়ালী গানঃ

জয়ন্তীহাজরা বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এক সময়ভাটিয়ালী গানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। ইদানিংকালে অনেক কমে গেছে। গ্রামের গাড়ীর গাড়োয়ান, নৌকার মাঝি এবং মাঠের রাখালী ভাটিয়ালী গানের গায়কহিসেবে আজও এই প্রাচীন লোকসংস্কৃতিকে ধারণ করে রেখেছে।

 

অষ্টগানঃ

চড়কপূজায় অষ্টগান পরিবেশিতহয়ে থাকে। চড়কপূজার ১৫ দিন পূর্বে পাড়ায় পাড়ায় অষ্টগানের দল বেঁধেঅষ্টগান পরিবেশিত হয়ে থাকে। জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের রোকেরা অষ্টগান গাওয়ার জন্য বাড়ী বাড়ী যায় এবং তারা কিছু টাকা পয়সা ডিনয়ে থাকে

 

পালা বা যাত্রাগানঃ

পালা বা যাত্রাগান খোকসায় সর্বত্র এখনও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি লোকসংস্কৃতি হিসেবে বিদ্যমান।রূপবানযাত্রা, ভাসানযাত্রা, ইমামযাত্রা, আসমান সিংহের পালাগানউলেস্নখযোগ্য। শীতকালের পুরো সময় এখানকার গ্রামাঞ্চলে, এমনকি খোকসার বিভিন্ন শহরের কেন্দ্রস্থলেও যাত্রাগানের আসর বসে থাকে। খোকসায় সরকারিভাবেনিবন্ধিত কোন যাত্রাদল নেই। তবে কতিপয় নিবন্ধীকৃত ক্লাব রয়েছে যারাপ্রতিবছরই নিয়মিতভাবে যাত্রাগানের আয়োজন করে থাকে।

 

পুতুল নাচঃ

এক সময় খোকসায় সর্বত্রপুতুল নাচ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। টিকিট কেটে পুতুল নাচ দেখার জন্যনারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভীড় জমাতে দেখা গেছে। এ থানায় বর্তমানে পেশাদারপুতুল নাচের কোন দল নেই। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এখানে পুতুল নাচপ্রদর্শন করতে আসে। পুতুল নাচ শিশু কিশোরদের বেশ আনন্দ দিয়ে থাকে।

 

 মেলাঃ

গ্রামাঞ্চল/শহরে বসবাসরত দরিদ্রজনগোষ্ঠীর চিত্তবিনোদনের জন্য আড়ং বা মেলা একটি অন্যতম মাধ্যম। মহররম, লাঠিখেলা, দোলযাত্রা উপলক্ষে ঝাকঝমকভাবে মেলা বসে থাকে। অজস্র মানুষ এসবমেলাতে অংশ গ্রহণ করে থাকেন।

জয়ন্তীহাজরার লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যেনাচ একটি উল্লেখযোগ্য অবদান। গ্রামে বিয়েরবাড়ীতে বর ও কনের উভয় পক্ষেরযুবক যুবতী এমনকি বুড়ো-বুড়িরা নাচে অংশ গ্রহন করে থাকেন। তবে প্রাচীনকালের তুলনায় আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।